বালু লুটপাট নিয়ে লঙ্কাকান্ড | তদন্ত রিপোর্ট

রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
নযথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হলো নাচোলের রাণী ইলা মিত্রের জন্মশত বার্ষিকী এইচএসসি ও সমমানের ফলাফল উপলক্ষে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের দুই নেতার শুভেচ্ছা ও প্রেরণার বার্তা “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বড়াইগ্রামে জামায়াতের শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ” নোঙর সভাপতি অধ্যাপক হাসানুজ্জামান এর ৫৯ তম জন্মদিন পালন করলো উত্তরণ পাবনা  বড়াইগ্রামে জামায়াতে ইসলামী’র বিশাল জনসভা শুক্রবার — জুলাই সনদ ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে প্রস্তুত প্রশাসন পুঠিয়ার শিলমারিয়ায় সনাতনী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের নারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ভাঙ্গুড়ায় আড়াই লক্ষ টাকার নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী জাল পুড়িয়ে ধ্বংস সিলেটে আ.লীগ নেতা বালু আপ্তাব পুলিশের জালে বাগমারা গণিপুরে অধ্যাপক কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩১ দফা গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ নাচোলে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০, থমথমে পরিস্থিতি এলাকায়।
বালু লুটপাট নিয়ে লঙ্কাকান্ড

বালু লুটপাট নিয়ে লঙ্কাকান্ড

Manual5 Ad Code

কুলাউড়া সংবাদদাতা: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মনু নদীর বালুমহাল থেকে উত্তোলনকৃত প্রায় ২৭ কোটি টাকার বালু নিয়ে ব্যাপক লুটপাট চলছে। প্রায় দুই বছর আগে ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও সরকারের বড় অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জমাটকৃত ওই বালু লোপাটের জন্য সাবেক ইজারাদার দীপক দে ও বর্তমান ইজারাদার নাজমুন নাহার লিপির যোগসাজশে চলছে রীতিমতো লঙ্কাকান্ড।

চলতি ১৪৩২ বাংলা সনে ওই বালুমহালের ইজারা পান হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার বাসিন্দা সেলিম আহমদের স্ত্রী নাজমুন নাহার লিপি। সাবেক ইজারাদার দীপক দে বর্তমান ইজারাদার না হলেও ব্যবসায়িক অংশীদার গড়ে তুলে পূর্বের জমাট করা প্রায় ৫ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট বালু থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ১ কোটি ঘনফুট বালু অবৈধভাবে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

Manual4 Ad Code

এদিকে উপজেলার হাজীপুর, পৃথিমপাশা, টিলাগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কে আইন অমান্য করে ১০ চাকার বালুবাহী ওভারলোড ডাম্পার ট্রাক দিয়ে অতিরিক্ত ওজনের ৩০ থেকে ৪০ টন লোডের গাড়ি চলছে এসব সড়কে। বালু পরিবহন করা হচ্ছে। এতে সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে কমছে স্থায়ীত্ব।

স্থানীয়দের দাবি, ১৪৩০ বাংলা সনের ইজারাদার দীপক দে কর্তৃক জমাট করে রাখা বালুর মেয়াদ যেহেতু শেষ তাই এখন তিনি ওই বালু বিক্রি করলে সেটা হবে অবৈধ ও বেআইনি। প্রশাসন যেন সরকারি এই বালু নিলামে বিক্রি করেন। এতে করে সরকারের কয়েক কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় বাড়বে।

Manual4 Ad Code

জানা গেছে, মনু নদীর কটারকোনা বাজার সংলগ্ন বালুমহাল থেকে সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। গত ১৪৩০ বাংলা সনে জেলা প্রশাসন থেকে ওই বালুমহাল ইজারা নেন পৃথিমপাশা ইউনিয়নের বাসিন্দা দীপক দে। তিনি নিয়ম বহির্ভূতভাবে মনু নদীর উপর নির্মিত কটারকোনা ব্রিজ ঘেঁষে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদী থেকে নদীর দুইপাশে বালু উত্তোলন করে রাখেন।

অথচ ব্রিজের পাশে কটারকোনা বাজারসহ ইউনিয়ন ভূমি অফিস, একটি স্কুল ও কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তৎকালীন সময় স্বৈরাচারি আওয়ামীলীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলন করে নদীর তীরবর্তী টিলাগাঁও ইউনিয়নের সালন, হাজীপুর ইউনিয়নের কনিমুড়া, হরিচক ও সাধনপুর নামকসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় কয়েক কোটি ঘনফুট বালু জমাট করেন দীপক দে। ইজারার মেয়াদকালীন সময়ে উত্তোলনকৃত বালু পুরোটা তিনি বিক্রি করেননি। যদিও সরকারি নিয়ম রয়েছে, ইজারার নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে উত্তোলনকৃত রাখা বালু বিক্রি কিংবা সরিয়ে না নিলে ওই বালু সরকার পরবর্তীতে নিলামে বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু দীপক দে সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ও বর্তমান ইজারাদার নাজমুন নাহার লিপির সাথে যোগসাজশ করে রাজনৈতিক নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে স্থানীয় লোকদের ধোঁকা দিয়ে সরকারি বালু অবৈধভাবে বিক্রি করছেন।

আরো জানা গেছে, এদিকে ওই বালু মহাল রক্ষণাবেক্ষনসহ বালু উত্তোলন, পরিবহন, বিপনন করার জন্য কুলাউড়ার ব্যবসায়ী আব্দুল হাছিবকে গত ৮ মে বৈধভাবে আমমোক্তার নিয়োগ করেন বর্তমান ইজারাদার নাজমুন নাহার লিপি। বর্তমানে ইজারাদার নাজমুন নাহার লিপি, তাঁর স্বামী সেলিম আহমদ, সহযোগী দীপক দে গং একটি বিশেষ মহল দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করলে আব্দুল হাছিব বাদী হয়ে কুলাউড়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে স্বত্ব ১৭৯/২০২৫ইং নং মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় নাজমুন নাহার লিপি ও তাঁর স্বামী সেলিম আহমদের বিরুদ্ধে আদালত অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করেন।

এরপর বর্তমান ইজারাদারের সহযোগী দীপক দে, জামিল ইকবাল, আব্দুল মুকিত গংয়ের বিরুদ্ধে বালু মহাল সংক্রান্ত কার্যাদি বাঁধা প্রদানের পাঁয়তারায় করলে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রার্থনা করলে আদালত তাদের বিরুদ্ধে অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বাদী আব্দুল হাছিবকে এবং দীপক দে ও জামিল ইকবাল গংয়ের বিরুদ্ধে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করেন।

বর্তমানে বাদী আব্দুল হাছিব কর্তৃক দখলে বিঘ্ন সৃষ্টি না করার মর্মে নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করেন। এদিকে মৌলভীবাজার জজ কোর্টের এডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর মাধ্যমে দীপক দে গংয়ের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আইনী নোটিশও পাঠান আব্দুল হাছিব। এদিকে আদালত থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর গত মঙ্গলবার আব্দুল হাছিব গং বালু মহালের বিভিন্ন স্থানে আদালতের নির্দেশনা সম্বলিত সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে রাখে। ওই সাইনবোর্ডটি সাবেক ইজারাদার দীপক দে, হাজীপুরের বাসিন্দা সুমনসহ তাদের ভাড়াটে লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়।

সরেজমিন দেখা গেছে, বালুমহালের তীর ঘেঁষে অন্তত ৫-৬টি স্থানে রাখা হয়েছে বিশাল আকারের বালুর স্তুুপ। সকাল থেকে রাত অবধি এসব স্থান থেকে ৩৫-৪০ টন ওজনের ১০ চাকার ড্রাম ট্রাক দিয়ে বালু পরিবহন করা হচ্ছে। এসময় স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, সাবেক ইজারাদার দীপক ও বর্তমান ইজারাদার নাজমুন নাহার প্রতিদিন পূর্বে উত্তোলিত বিভিন্ন স্থানে জমাট করা কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি করে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন।

যার কারণে টিলাগাঁও সালন, হাজীপুরের কনিমোড়া,হরিচক ও সাধনপুর এলাকায় এলজিইডিসড়ক সহ নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সড়কের অনেকাংশ ফেটে ভেঙে চৌচির হয়ে যাবে। এছাড়া সালন এলাকায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের উপর দিয়ে বালুবোঝাই বড় গাড়ি চলাচল করায় নদীর পাড় ধ্বসে পড়ছে এমনকি সড়কের বিভিন্ন স্থান দেবে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে নদীর বাঁধ চলতি বর্ষা মৌসুমে হুমকির মুখে পড়বে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ছোট ছোট যানবাহন ও যাত্রী সাধারণ। এনিয়ে স্থানীয় লোকজন গত সোমবার রাতে কনিমোড়া এলাকায় গাড়ি আটকে প্রতিবাদ করলে এলাকাবাসীর ওপর চড়াও হন ইজারাদারের ভাড়াটে লোকজন।

Manual5 Ad Code

এ বিষয়ে অভিযুক্ত দীপক দে জানান, ১৪৩০ সনে বিভিন্ন জটিলতার কারণে বালু সময়মত জমাট করা স্থান থেকে সরাতে পারিনি। তাই বর্তমান ইজারাদারের সাথে অংশীদার হয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন ও পূর্বের উত্তোলিত বালু সরকারি উন্নয়ন কাজের জন্য অন্যত্র নিচ্ছি।

বর্তমান ইজারাদার নাজমুন নাহার লিপির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তাঁর স্বামী সেলিম আহমদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

হাজীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মতিউর রহমান বলেন, পূর্বে উত্তোলিত বালুর পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট। যার বাজারমূল্য ৫ টাকা করে হলেও প্রায় ২৭ কোটি টাকা। সেই বালু থেকে অবৈধভাবে সাবেক ও বর্তমান ইজারাদার যোগসাজশ করে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই অনেক বালু অবৈধভাবে বিক্রয় করছেন যা এসিল্যান্ড স্যারের উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে বন্ধ ও জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত বালু বর্তমানে প্রশাসনের জিম্মায় আছে এবং জমাট করা বালুতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বুধবার বিকেলে লাল সংকেত সম্বলিত পতাকা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন এসিল্যান্ড স্যার বরাবরে পাঠিয়েছি।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ জহরুল হোসেন বলেন, ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সেই বালু নেয়ার কোনো আইনী বিধান নেই। অবৈধভাবে বালু বিক্রির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু জব্দ করে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আইন অমান্য করে যদি কেউ আবার বালু নেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক স্যারকে পাঠাবো।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোছাঃ শাহীনা আক্তার বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Manual6 Ad Code

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Add



© All rights reserved © tadantareport.com
Design BY Web WORK BD
ThemesBazar-Jowfhowo

Follow for More!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code
error: Content is protected !!